শনিবার, ৬ মে, ২০১৭

সাংবাদিকতা হারাম পেশা ?


----------------
জীবনের অলিগলি-২০

সাংবাদিকতা হারাম পেশাঅথচ তিনি হোটেলের মারণঘাতী ক্যামিক্যাল ব্যবসা করেন।


একবার ব্যবসায়িক প্রয়োজনে লেকসিটি কনকর্ড শপিং কমপ্লেক্সে গিয়েছিলাম। একটি স্বঘোষিত নামী-দামী প্রতিষ্ঠানের কিছু কাজ করার জন্য কাজের কোয়ালিটি ও সার্বিক দিক বিশ্লেষণ করে আমার প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে একটি দরপত্র প্রদান করেছিলুম। প্রতিষ্ঠানের মালিক পক্ষের প্রধান ব্যাক্তি গায়ে ইয়া আলখেল্লা সহ ইত্যাদি ইত্যাদি।

আমাকে বললেন যে কোন ভাবে আপনি মুল্য কমিয়ে ফেলুন।আমি বললাম- চাচা আপনার পণ্যের মান অক্ষুন্ন রাখতে আমার প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এর চাইতে দর কমানো সম্ভব নয়, আমাদের মুল্য যদি আপনার পছন্দ না হয় তবে আপনারা অন্য প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তিবদ্ধ হতে পারেন।


বলাবাহুল্য আমাদের প্রতিষ্ঠানের চাইতে ভালমানে কম মূল্যে আর কেহ এদের কাজ করতে নারাজ। আর তাই তিনি আমাকে চাপ দিয়ে কাজটি করার জন্য আমার প্রতিষ্ঠানকে বাধ্য করতে চাইছেন।

আমাকে মানষিকভাবে দুর্বল করার লক্ষ্যেই হঠাৎ বলে বসলেন আপনি যে ব্যবসা করেন সেটা ঠিক আছে, কিন্তু সাংবাদিকতা ও মিডিয়াতে কাজ করেন কেন ? এটাতো হারাম। আমি অবাক হলাম তার এমন আচমকা ফতোয়া জারিতে। বিনয়ের সহিত বললাম আসলে সব পেশাতেই হালাল হারাম দুটোই আছে। আমার কথাটা ভদ্ররনোকের পছন্দ হলোনা। বলে বসলেন আপনার জীবনের সমস্ত উপার্জন হারাম হয়ে গেল। আমি নিজের জিহ্বাকে সংযত করার চেষ্টা করলাম।

ভাবলাম উত্তর না দিলে এ লোক আরো বহু মানুষকে এমন আজগুবি ফতুয়ার রোষে ফেলবে। তাই বললাম চাচা আপনি যা বললেন, তা কি বুঝে-শুনে বলছেন ?’ তিনি মহা রেগে গেলেন। এক পর্যায়ে বলে বসলেন আমার কথা যদি বিশ্বাস না হয় তবে অমুক (প্রসঙ্গত উক্ত হুযুর ইতি পূর্বে কোন একটি সুদ ভিত্তিক ব্যাংক থেকে বিনিয়োগ নিয়েছেন, তা আমি যানি)  হুযুরকে জিজ্ঞাসা করেন।

আমি একটু কড়া সুরেই বললাম- উনি কি ফতুয়া দিবেন, নিজেই হারাম-হালালের তোয়াক্কা করেন না। আর তাছাড়া কোন হুযুর বা আলেম দলিল নয়। আমাদের সামনে পবিত্র কুরআন রয়েছে। আমরা সে কোরআন থেকেই জানতে পারি। এবার উনি মহা ক্ষেদের সহিত বললেন আপনি তো বেশি বেড়ে গেলেন। পবিত্র কুরআন আপনি বুঝেন ?  কি রেজাল্ট পাবেন ওখানে ?

আমি হেঁসে বললাম, দুঃখিত চাচা আপনি হয়ত জানে না। আমি মাদরাসা থেকে কামিল পাশ করেছি। তা ছাড়া পবিত্র কুরআন জানতে বড় আলেম হওয়া জরুরী নয়, বরং মহাগ্রন্থ আল-কুরআন সকল মানুষের পড়ার ও জানার সুযোগ ও অধিকার আছে।

এবার তিনি সত্যি রেগে গেলেন। এক পর্যায়ে তিনি আমাদের প্রতিষ্ঠানের ফাইল ফেরত দিলেন আর বললেন আপনার সাথে কথা বললে আমি কাফির হয়ে যাব, আপনার প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করবনা।


আমি মুচকি হেঁসে সালাম দিয়ে তার অফিস থেকে বেরিয়ে পড়লাম। ফুটপাথে হাঁটতে হাঁটতে কুরআন সবার জন্যঅনুষ্ঠানের আমার অভিনীত একটি নাটিকা কফি হাউসের সেই আড্ডাএর একটি সংলাপ মনে পড়ে গেল- মাছ যেমন পানিতে ডুবে থাকে, তোরাও তেমনি ভূলের সাগরে ডুবে আছিস। আর আকাশের দিকে তাকিয়ে মহা প্রভুকে বললাম হে মালিক, আর কতটি কাঁচা মরিচের চানাটক লিখে জাতিকে সচেতন করতে পারব ?...




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন